এ.বি সিদ্দিক (সিকদার এগ্রো): মাংসল জাত ব্রাহমা। ব্রাহমা জাতটি মূলত তিন ধরনের গরুর উপজাত থেকে ব্রহমা জাত তৈরি হয়েছে। এর উপজাত গুলো হলো গুজরাট,নেপাল ও গীর।
দৈহিক আকারঃ মাংসল জাতের গরুর মধ্যে ব্রাহমা জাতের গরু মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে।পা তুলনামূলক ভাবে লম্বাকৃতির হয় তবে শারিরিক গঠন চিন্তা করলে তা লম্বা মনে হয় না।
দৈহিক ওজনঃ জন্মকালীন বাচ্চার ওজন হয়-২৭থেকে ৩৫ কেজি। ১বছরের বাচ্চার ওজন হয়-৩৫০থেকে৪০০ কেজি। পূর্ণবয়স্ক গাভীর ওজন হয়-৪৫০থেকে ৭০০কেজি। পূৃণবয়স্ক ষাঁড়ের ওজন হয়-৮০০থেকে ১০০০কেজি বা তার থেকে বেশি।
মাথার গঠনঃ মাথা সাধারণত ছোট ও লম্বা আকৃতির হয়। শিং নেই বললেই চলে তবে ছোট আকৃতির হতে পারে।
কুঁজঃ ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের কুঁজ অনেক বড় আকৃতির হয় তবে গাভীর কুঁজ ছোট আকৃতির হয়।
চামড়াঃ চামড়া সাধারণত নরম ও ঢিলা হয়।গলার নিচে লম্বাকৃতির তুলতুলে গলকম্বল হয়।এজাতের গরুর গায়ে ছোট,মোটা ও চকচকে লোম থাকে।
গায়ের রংঃ ব্রাহমা জাতের বাছুর জন্মের সময় সাদা,হালকা ধূসর থেকে লাল রংয়ের হয়।আবার অনেক সময় কালো রংয়ের হয় থাকে।তবে ব্রাহমা জাতের গরুর গায়ের রং সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে।
স্বভাবঃ ব্রাহমা জাতের গরু অনেক শান্ত প্রকৃতির অথচ কর্মঠ।এ জাতের গরু পরিবেশের তাপ মাত্রার তারতম্যের সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।তাছাড়া খাদ্য সংকটের সময় খুব সাধারণ মানের খাদ্য খেয়ে দৈহিক বৃদ্ধি অব্যহত রাখতে পারে।
তাপ সহনশীলতাঃ উষ্ণ মন্ডলীয় আবহাওয়ার মাংসল জাতের গবাদি পশু পালনের জন্য অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হলো উক্ত জাতের গবাদি পশুর তাপ সহনশীলতা।ব্রাহমা জাতের গরুর চামড়ায় রঞ্জক বিদ্যমান থাকায় সূর্যের শক্তিশালী রশ্মি ছাকনির মত আটকে দিয়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।অন্যান্য গবাদি পশুর থেকে ব্রাহমা জাতের জাতের গরুর ঘর্মগ্রন্থি থেকে মুক্ত ভাবে ঘাম নির্গত হতে পারে ফলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি সুবিধা হয়।তাছাড়া গীষ্ম কালে পরিবেশের তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পায় তখন ব্রাহমা জাতের গবাদি পশুর পানি গ্রহন অনেক বেড়ে যায়,ফলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হয়।ব্রাহমা জাতের গরুর চামড়া ঢিলা থাকায় শরীল থেকে তাপ বিকিরণ বেশি হয়।ফলশ্রুতিতে গরু অস্বস্থি বোধ করেনা এবং বিপাকীয় তাপমাত্রা সঠিক থাকে।
এক গবেষনায় বিশেষজ্ঞগনের প্রাপ্ত ফলাফল ব্রাহমা জাতের গরু ৪০.৫ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্বাভাবিক আচরণ ও খাদ্য গ্রহন করে থাকে তেমন কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়না।
অপরদিকে শীত প্রধান আবহাওয়ায় ব্রাহমা জাতের গরুর গায়ের শক্ত ও লম্বা লোম যুুক্ত কম্বলের মত মোটা চামড়া অতিরিক্ত শীত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
মাংস উৎপাদন ক্ষমতাঃ ব্রাহমা জাতের গরুর রুমেন ছোট হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তাদের শরীর অধিক মাংসাল হয়, ফলে বিক্রয় যোগ্য মাংসের পরিমান তুলনামূলক বেশি হয়।ব্রাহমা জাতের গরুর বিভিন্ন অংশে চর্বির সমতা বজায় থাকে।সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় হলো মাংস পেশীর অভ্যন্তরে চর্বি কম থাকে ফলশ্রুতিতে চর্বিজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম থাকে।
ব্রাহমা গরু অনেকটা দেশি গরুর মত করে আমাদের দেশে পালন করা সম্ভব। তবে যত্নের উপর একটু খেয়ালি হতে হবে।