ব্রেকিং নিউজ

কালজয়ী শাজার ১১তম মৃত্যু বার্ষিকীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান

ইসমাইল হোসেন (জামালপুর) সরিষাবাড়ী প্রতিনিধিঃ জামালপুরের সরিষাবাড়ীর উজ্জ্বল নক্ষত্র ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশস্ত সহচর, ব্যথার সহমর্মি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জেলা আওয়ামী লীগ ও আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রয়াত এডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদারের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন তারই কৃতীসন্তান, মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি ও উপজেলা প্রশাসন এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। জানা যায়, এই উজ্জ্বল ধ্রুবতারা ১৯৩৪ সালে ১ লা নভেম্বর সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের নিভৃতপল্লী দৌলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবা মরহুম আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার ও মা মরহুমা হালিমা খাতুন তাকে আদর করে শাজা বলে ডাকতেন। শাজার শিক্ষাজীবন শুরু হয় পিংনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণী থেকে এবং ১৯৫৪ সালে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জামালপুর আশেক মাহমুদ কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ইন্টারমিডিয়েট ও বি. এ পাশ করেন। জানা যায় তিনি কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৫৭ সালে ছাত্র সংসদের ভি.পি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তারপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় পদচারণ করেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আবাসিক ছাত্র হিসেবে নিজেকে নিযুক্ত করেন বলে জানা যায়।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন কালেই পাশাপাশি একইসাথে সিটি ল’কলেজে আইন বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন এবং ১৯৫৯ সালে এম.এ ডিগ্রি ও ১৯৬৩ সালে আইন বিষয়ে ব্যাচলর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছিলেন পারদর্শী। তার প্রিয় খেলা ছিল ভলিবল। এসবের পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ঢাকা হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে মায়ের ইচ্ছায় ছাত্রজীবনেই ১৯৬০ সালে মনোয়ারা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ সন্তানের জনক।তার জ্যেষ্ঠ সন্তান এডভোকেট মাহমুদ হাসান তালুকদার (এম.এ. এল.এল.বি) পাশ করে বর্তমানে তিনি ঢাকা হাই কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তার মেঝ সন্তান ডাঃ মুরাদ হাসান( এম.বি. বি.এস.এম. ফিল) শেষ করে বর্তমানে তিনি সংসদ সদস্য জামাল পুর -৪, এবং বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর কনিষ্ঠ তনয়া মমতাজ জাহান দ্বিজু ( বি.এ.অনার্স, এম.এ) পাশ করে এখন বিবাহিত গৃহিণী।

এডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে লালন করে ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবীতে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের স্বাধীকার আন্দোলনে নিজেকে একনিষ্ঠ সৈনিক বলে নিয়োজিত করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে তদানীন্তন জামালপুর মহকুমায় আইন পেশায় কর্ম শুরুর পাশাপাশি ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনে জামালপুর ও শেরপুর থানার নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৭০ সালে গণপরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চান গ্রামে গ্রামে বলে জানা যায়। পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী বাঙালি নেতৃত্ব মেনে না নেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের নির্দেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন এই বীর সৈনিক। ১১ নং সেক্টরে মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্প মুক্তিযুদ্ধের দক্ষ সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং যুদ্ধ চলাকালীন মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্পে মুজিবনগর সরকার স্থাপিত বিচার বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্বরাত ছিলেন বলে জানা যায়।

১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাকে বাকশালের জামালপুর জেলা শাখার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর সপরিবার যখন শহীদ হন । তখন দেশে নেমে আসে রক্তচক্ষুর শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতনের ষ্টীম রোলার। তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে পুর্ণগঠনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তিনি জামালপুর ও শেরপুর থানার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুর (০১) আর্দশের ছায়াতলে নিয়ে আসেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জামালপুর জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পান। তার পেশাগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ছিলেন অতুলনীয়। তিনি অসাম্প্রদায়িক উদারচিন্তার মানুষ ছিলেন। তার মানবতা আর সৃজনশীলতা ছিল বিস্তৃত। তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন পোগলদিঘা হাই স্কুল, পোগলদিঘা কলেজ, এবং নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।

তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি তারা কান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত লিংক রেলপথ স্থাপনের আন্দোলন গড়ে তোলার নেতৃত্ব দেন সংগঠক হিসেবে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত রেলপথ উদ্ভোদন করেন এবং তার নামানুসারে পুরাতন জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে এডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার রেলওয়ে স্টেশন স্থাপিত করেন। তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক, জীবন সংগ্রামের প্রতিটি সিঁড়ি পেরিয়েছেন সফল সৈনিক হিসেবে। তার কর্মময় জীবনের পবিত্র আর্দশ আমাদের সকলের জন্য অনুস্মরণীয় ও অনুকরণীয় বলে মনে করেন অন্তরালের গুণী মহল। এডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার ২০০৮ সালে ১৬ ই জুলাই এই জগৎ সংসারের মধুমায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।

তার মৃত্যুতে সরিষাবাড়ি তথা জামালপুর আওয়ামী লীগ অঙ্গন হারিয়েছে একজন আর্দশবান রাজনৈতিক নেতা আর পরিবার পরিজন হারিয়েছে বিজ্ঞ অভিভাবক ও ভালবাসার অকৃত্রিম মানুষ। তার রেখে যাওয়া অসামান্য অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে আগামী প্রজন্মের পরে প্রজন্ম আর হৃদয়ে রেখে দিবে সুন্দর জীবন গড়ার পথিকৃৎ হিসেবে বলে মনে করেন প্রবীণ সহচর সহমর্মি নেতাকর্মীরা।

Leave a Reply