জুবায়ের আহমেদ: ভারতীয় ক্রিকেটে তিন উইকেটকিপার মহেন্দ্র সিং ধোনি, পার্থিব প্যাটেল ও নির্দেশ কার্তিকের অভিষেক হয়েছিল প্রায় একই সময়ে, পার্থিব প্যাটেলের ২০০২ সালে অভিষেকের বিপরীতে ২০০৪ সালে অভিষেক হয় ধোনি ও কার্তিকের। তবে কার্তিক ও পার্থিবকে ছাপিয়ে ধোনিই হয়ে উঠেন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ভরসার নাম, উইকেট কিপিং সহ ব্যাট হাতে নিয়মিত দূর্দান্ত সব সাফল্য পেয়ে পেছনে ফেলে দেন অপর দুই প্রতিদ্বন্ধিকে।
কার্তিক ও প্যাটেল ধোনির ছায়া হয়ে গেলেও হারিয়ে যাননি ভারতীয় ক্রিকেট থেকে, পেশাদারিত্বের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে বারবার ফিরে এসেছেন জাতীয় দলে, পার্থিবের তুলনায় অবশ্য কার্তিক ভারতীয় দলে খেলেছেন একটু বেশিই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিলেও কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি কার্তিকের, তারপর অনিয়মিত ভাবে খেলেছেন ২০১০ সাল পর্যন্ত, এর আগে খেলা হয়নি ২০০৮ সালেও, ২০১০ সালের পর ২০১১ ও ২০১২ সালে দলের বাহিরে থাকার পর ২০১৩ সালে ফিরে ২০১৪ সাল পর্যন্ত খেলে আবারো বাদ, সুযোগ হয়নি ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ও ২০১৬ সালেও, ২০১৭ সালে পুনরায় ফিরে বর্তমান অবধি নিয়মিতই আছেন ভারতীয় দলে এবং জায়গা করে নিয়েছেন আসন্ন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। অপর দিকে পার্থিব প্যাটেল অনিয়মিত ভাবে ৩৮টি ওয়ানডে খেলেছেন ২০১২ সাল পর্যন্ত, আর টেস্ট দলে খেলেছেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত। তারপর আর সুযোগ হয়নি।
বাংলাদেশ সহ অনেক দেশেই দল থেকে বাদ পড়লে পুনরায় বারবার সুযোগ করে নেওয়ার তেমন একটা নজির দেখা যায়নি সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। পার্থিব ও কার্তিকের পরে অভিষেক হওয়া ধোনি দলে স্থায়ী জায়গা করে নেওয়ায় আড়ালে চলে যাওয়া কার্তিক ও প্যাটেল ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেছেন নিয়মিত, ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রচুর ম্যাচ ও অর্থ থাকায় কার্তিক-প্যাটেল সহ অন্যান্য ক্রিকেটাররা জাতীয় দল ছাড়াও তারকাখ্যাতি পায়, পায় অর্থ ও সম্মান, যার কারনে নির্ভার হয়ে পারফর্ম করার সুযোগ থাকে বেশি ভারতীয়দের। পারফর্ম করে, জাতীয় দলের জন্য নিজেদের সব সময়ই প্রস্তুত রাখতেন পার্থিব ও কার্তিক, ফলে বারবার ফিরে এসেছেন এবং টেস্ট থেকে ধোনির অবসরের পর পার্থিবও টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন, আর ধোনি থাকার পরও বহু ম্যাচে একসাথে খেলেছেন কার্তিক, ২০১৭ সাল থেকে দলে আছেন নিয়মিতই এবং টি২০ ফরম্যাটে বর্তমানে ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা পারফর্মারও কার্তিক।
আসন্ন বিশ্বকাপে কার্তিককে পেছনে ফেলে ২য় উইকেটকিপার হিসেবে রিসাভ প্যান্ট এর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও বিরুদ্ধ কন্ডিশনে বিশ্বজয়ের ভাবনায় তারুন্যের চেয়ে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দিয়েই কার্তিককে জায়গা করে দিয়েছে ভারতীয় বোর্ড।
২০০৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর ধোনির ছায়া হয়ে জাতীয় দলে খেলা কার্তিক দীর্ঘ ১৪ বছর পরও ভারতীয় দলে খেলা এবং বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে জায়গা করে নেওয়ার নিঃসন্দেহে গৌরবের, ক্রিকেটে শেষ বলে কিছু নেই, হতাশায় ভেঙ্গে পড়া ঠিক নয়, পারফর্ম করলে সুযোগ আসবেই, এভাবেই বারবার ফিরে আসা কার্তিককে দেখেই অনুপ্রেরণা নিতে পারে বহু তরুন ও বাদ পড়া ক্রিকেটার।
