২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে উৎসাহ ইতিমধ্যে তুঙ্গে অনুরাগীদের মধ্যে। শুধু শুরুর দিনটা আসার অপেক্ষা। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আসর বসেছিল ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের। সেবারের কথা ধরলে, ২০১৯ সালে যে বিশ্বকাপ আয়োজন হতে চলেছে, তাতে অনেক নতুন ক্রিকেটারকে দেখা যাবে। একাধিক তারকা মাঝের এই সময়টাতে বুটজোড়া তুলে রেখেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপের পাঁচ অধিনায়ক এমন আছেন, যাঁদের ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রচণ্ডভাবে মিস করবেন। কারণ, এই পাঁচ অধিনায়কের মধ্যে বর্তমানে চার তারকা ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন।
৫. মিসবাহ-উল-হক (পাকিস্তান)-: পাক ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হন মিসবাহ। ২০০৭ উদ্বোধনী টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষ মুহূর্তে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে টিমকে ডোবালেও, অধিনায়ক মিসবাহ’র নেতৃ্ত্বেই ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংল্যান্ডকে টেস্টের আসরে হারিয়ে এসেছে পাকিস্তান। টেস্টের আসের মিসবা আদর্শ ক্রিকেটার হলেও, তাঁর খেলার স্টাইল যা ছিল, তাতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টিকে থাকার উপযোগী ছিলেন না।
যদিও তিনি তিন ধরণের ফরম্যাটেই টিমকে নেতৃত্ব দেন। অধিনায়ক হিসেবে মিসবাহ যেমন বোর্ডকে পাশে পেয়েছিলেন, তেমনই টিমের ক্রিকেটাররাও তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে পাক টিম তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল এবং দৌড় কোয়ার্টার-ফাইনালে গিয়ে থামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বিদায়ী মঞ্চেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানিয়ে দেন পাক অধিনায়ক। তবে, টেস্টের আসরে পাক টিমকে প্রথম বারের জন্য শীর্ষস্থানে তোলার পরই বিদায় নেন। ২০১৭ সালে পাঁচদিনের ক্রিকেটকেও বিদায় জানিয়ে এখন মিসবাহ প্রাক্তন ক্রিকেটার আর অধিনায়ক।
৪. উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (আয়ারল্যান্ড)-: আইরিশ ক্রিকেটের সূচনা অনেকদিন আগে হলেও, এখনও পর্যন্ত বড় শক্তি হয়ে উঠতে ব্যর্থ তারা। তবে, আয়ারল্যান্ড টিমে এমন কয়েকজন আছেন, যাঁরা বিশ্বমঞ্চে সম্মান আদায় করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম নাম উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। অধিনায়কত্ব ব্যাপারটা তাঁর মধ্যে জন্মগত। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আয়ারল্যান্ডের জয় এখনও রোমাঞ্চের শিহরণ এনে দেয় ক্রিকেটপ্রেমীদের শরীরে। ২০১৫ বিশ্বকাপে নক আউট পর্যায়ে যাওয়ার রাস্তা শেষ মুহূর্তে এসে হারিয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের জন্য। রান-রেটের বিচারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এগিয়ে যায়। ২০১৮ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে আয়ারল্যান্ড কোয়ালিফাই করতে না পারায়, এবার তারা বিশ্বকাপে নেই।
৩. এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)-: ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রোটিয়া টিমকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিস্টার থ্রি সিক্সটি। অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন অনেকদিন হলো। টিমে খেলে আসছিলেন ব্যাটিং ও ফিল্ডিং তারকা হিসেবেই। ধরেই নেওয়া হয়েছিল, ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলে কেরিয়ারে ইতি টানবেন লেজেন্ডারি এবি। কিন্তু, ভারতে এসে একাদশ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে অভিযান শেষ করার পর আচমকাই নিজের অবসর ঘোষণা করে দেন মিস্টার থ্রি সিক্সটি। বলে দেন, তিনি ক্লান্ত। তাঁর জায়গাটা এবার অন্য কাউকে নিতে হবে। আব্রাহাম বেঞ্জামিনের নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযান শেষ হয় সেমিফাইনালে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। গত বিশ্বকাপেই কিংবদন্তি এবি ৬৬ বলে ১৬২ রান করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ক্যারিবিয়ান টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচে।
২. ব্রেন্ডন ম্যাকালাম (নিউজিল্যান্ড)-: কিউয়ি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত ম্যাকালাম। তাঁর খেলার স্টাইল কিউয়ি ক্রিকেট দারুণ পরিবর্তন আনে। ন্যাথান অ্যাস্টল পরবর্তী জমানায় কিউয়ি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টার থেকে বাজ সর্বকালের সেরা মেগাস্টার হয়ে ওঠেন। কিউয়ি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক হিসেবেও ব্রেন্ডন ছাপিয়ে যান স্টিফেন ফ্লেমিংকেও। কিউয়ি ক্রিকেট ইতিহাসে ম্যাকলাম একমাত্র অধিনায়ক যিনি টিমকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে কাপ অধরা থেকে যাওয়ার পর ২০১৬ সালে গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চিরবিদায় জানিয়ে দেন বাজ।
১. মাইকেল ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া)-: ক্লার্কের কেরিয়ার যখন শুর হয়, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিম তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছিল। স্টিভ ওয়ার হাত থেকে রিকি পন্টিংয়ের হাতে অধিনায়কত্ব স্থানান্তিত হওয়ার পর ক্রিকেট বিশ্বে আরও ছড়ি ঘোরাচ্ছিল অজি টিম। তারপর একাধিক বড় তারকার অবসরের পর সেই সময়কার ক্রিকেটার বলতে একাই ছিলেন মাইকেল। ক্লার্ক লেজেন্ডারি কি না, সে নিয়ে তর্ক করাই যায়, তবে এটা কিন্তু সত্যি সে দেশের পাঁচবারের বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাসে ক্লার্ক অন্যতম ট্রফিজয়ী অধিনায়ক।
২০১৫ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি জেতে অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টের আসরে একাধিক বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী পাপ, ওডিআই আসরে দেশকে বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দিয়েই অবসর ঘোষণা করে দেন। কেরিয়ারের গোটা সময়টা পিঠ চোট নিয়েই খেলে গিয়েছিলেন ক্লার্ক।
