শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানদের উপর এতটাই আধিপত্য দেখাতেন যে তাকে রহস্য স্পিনার হিসেবে বর্ণনা করা হতো। মাঝে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে হাজারো প্রশ্ন এবং আইসিসি’র নিষেধাজ্ঞা সুনীল নারিনের গরিমা কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন করেছে। একাধিকবার বোলিং অ্যাকশন বদলেছেন। চোটের জন্য মাঠের বাইরে থেকেছেন বেশ কিছুদিন। তার পরেও সুনীল নারিন নিজের বোলিংয়ের মান ধরে রেখেছেন, এই বিষয়টাই অবাক করে কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিন বোলিং কোচ কার্ল ক্রো’কে।
লেস্টারশায়ারের হয়ে দীর্ঘদিন কাউন্টি ক্রিকেট খেলা কার্ল ক্রো সুনীল নারিনের বোলিং অ্যাকশন বদলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই সামনে থেকে দেখেছেন ক্যারিবিয়ান তারকার পরিবর্তন। আধুনিক ক্রিকেটে এত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জন্য তৈরি রাখা সহজ নয় বলেই মনে করেন কার্ল। তবে ব্যাটসম্যান হিসেবে নারিনের উত্থান চমকপ্রদ বলেই মনে হয়েছে নাইটদের স্পিন বোলিং কোচের।
নারিন প্রসঙ্গে ক্রো বলেন, ‘আঙুলের চোটের জন্য সুনীল পিএসএল (পাকিস্তান সুপার লিগ) খেলেনি। তবে এখন ও পুরোপুরি সুস্থ এবং মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত। আমি মনে করি ওর পারফরম্যান্স সব সময় অতি উচ্চমানের। এখন তো ব্যাট হাতেও সক্রিয় অবদান রাখে সুনীল।’
বিগ ব্যাশ লিগে ওপেনার হিসেবে সাফল্য পাওয়ার পর আইপিএলেও পিঞ্চ হিটার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নারিন। তবে ২০১২ ও ২০১৪ কেকেআরের আইপিএল জয়ে বোলার নারিনের অবদান ছিল প্রশ্নাতীত। কার্ল বলেন, ‘আইপিএলের প্রথম কয়েক বছর নারিনের পারফরম্যান্স ছিল দুরন্ত। ব্যাটসম্যানরা প্রতিনিয়ত ওর বোলিং নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছে। ফলে ওকে সামলানো তুলনায় সহজ হয়েছে সন্দেহ নেই। তবে আমি মনে করি এখনো ও রহস্য স্পিনারই আছে। এখনও ও ক্রমাগত উইকেট নিয়ে চলেছে। তবে এটা ঠিক যে বারবার অ্যাকশন বদল করেও বোলিংয়ের সেই কার্যকারিতা বজায় রাখা মুশকিল। তা সত্ত্বেও ও সেটা করে দেখাতে পেরেছে।’
চোটের জন্য শুধু পিএসএল থেকে দূরে ছিলেন এমনটা নয়, বরং নারিন বেশ কিছুদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলের হয়েও মাঠে নামেননি। স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘদিন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকা অসুবিধার হবে কিনা এ প্রসঙ্গে কার্ল জানান বিষয়টা কেকেআরের কাছে শাপে বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। ক্রো’র কথায়, ‘নারিন সবেমাত্র আঙুলের চোট সারিয়ে মাঠে ফিরেছে। চোট থেকে ফিরে আসা মানে বেশ কিছুদিনের বিশ্রামে তরতাজা হয়ে মাঠে নামতে পারবে ও। নিজেকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
একা সুনীল নারিনকে নিয়েই নয়, কার্ল উচ্ছ্বসিত টিম ইন্ডিয়ার রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবকে নিয়েও। চায়নাম্যান কুলদীপ প্রসঙ্গে ক্রো বলেন, ‘গত দু-তিন বছর কেকেআরের সঙ্গে রয়েছি। সেই সূত্রে কুলদীপের সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সামনে থেকে ওকে পরিণত হয়ে উঠতে দেখেছি। ওর সারল্য ও ঠান্ডা মাথা আমাকে অবাক করেছে। ওর সব থেকে বড় গুন হলো মার খেতে ভয় পায় না। নিজের বোলিং এর উপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে এমন মানসিকতা সব সময় স্পিনারদের সাহায্য করে।’
সব মিলিয়ে কেকেআরের স্পিন বিভাগ নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কার্ল। তার কথায়, ‘প্রত্যাশা থাকা ভালো। এটা আপনাকে সবসময় চাপে রাখে। আমাদের হাতে তিনজন দারুন স্পিনার রয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রমাণ করেছে। কেসি (কারিয়াপ্পা)-র দলে যোগ দেওয়াটাও দারুন ব্যাপার। এই মুহূর্তে ও ভালো ফর্মে রয়েছে। আশা করছি তারা চূড়ান্ত সফলতা এনে দিবে।’
আসুন কেকেআরের চূড়ান্ত স্কোয়াডে একঝলক চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান: দীনেশ কার্তিক (ক্যাপ্টেন), রবিন উথাপ্পা, নিখিল নায়েক৷
ব্যাটসম্যান: ক্রিস লিন, নীতিশ রানা, শুভমন গিল, রিঙ্কু সিং, জো ডেনলি৷
অলরাউন্ডার: আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, অ্যানরিচ নর্টজে, শ্রীকান্ত মুন্ধে, কার্লোস ব্রাথওয়েট৷
বোলার: পীযুষ চাওলা, কুলদীপ যাদব, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, কেসি কারিয়াপ্পা, সন্দীপ ওয়ারিয়র, লোকি ফার্গুসন, হেনরি গার্নি, পৃথ্বীরাজ ইয়ারা৷