অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটে নাটোরের ‘বিস্ময় বোলার’ পিতৃহীন বাঁধনের …।নাম তার বাঁধন শেখ। নাটোর জেলার সদরের বড় হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বয়স ১১ বছর ৪ মাস।ওই গ্রামের চেয়ারম্যান পাড়ায় বাড়ি তার।
ছোট্ট বয়সেই বাবাকে হারিয়েছে বাঁধন। আরও চার বছর আগে মারা গেছেন তার বাবা
ইয়াসিন শেখ।
এমনিতেই অভাব অনটনের সংসার। তার ওপর বাবার মৃত্যু এই পরিবারকে ঠেলে দেয় গভীর অন্ধকারে। বাঁধন ছাড়া পরিবারে আছে তার মা, এক বোন ও এক ভাই। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। স্থানীয় একটি লোকাল বাসে হেলপারি করেন তিনি। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তার নিজের সংসারই চলে না। এরপর ছোট ভাই বাঁধন ও মা-বোনের দেখাশুনা করার ইচ্ছা থাকলেও হয়তো সাধ্যে কুলায় না তার।
তাই বাধ্য হয়েই অন্যের বাড়িতে বুয়ার কাজ করতে হয় বাঁধনের মা কোহিনুর বেগমকে। এথেকে সামান্য যা টাকা পান, তা দিয়েই ছোট্ট বাঁধনের রুজির ব্যবস্থা ও পড়াশুনার খরচ চালাতে হয়।এভাবেই কোনো রকম দিনাতিপাত করছেন বাঁধন ও তার মা। আর তাতে ভেস্তে যেতে বসেছে ছোট্ট বিস্ময় বালক বাঁধনের স্বপ্ন। শুধু, স্বপ্ন নয়,একটি মহাস্বপ্ন। কেননা, এই বালকের মধ্যে রয়েছে অসাধারণ ক্রিকেটীয় গুণ। এ কারণেই তাকে এখানে বিস্ময় বালক হিসেবে আখ্যা দেওয়া।
বাঁধন একজন বাঁ-হাতি স্পিন বোলার। তবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য লেগ স্পিন করে ক্ষুদে এই ক্রিকেটার। তার এই বোলিং মেধার পেছনে রয়েছেন একজন কারিগর, যার হাতে উঠে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের স্পিনা তাইজুল ইসলামের মতো বোলার। এই আনসাং হিরোর নাম মোখলেসুর রহমান রনি। তার নিজস্ব ক্রিকেট কোচিংয়ে বিনা পারিশ্রমিকে বাঁধনকে বোলিং শিক্ষা দেন রনি।
সম্প্রতি বাঁধনের অসাধারণ স্পিন মেধা নজরে আসে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়। গত ২৫ জানুয়ারি সারাদেশের মতো নাটোর জেলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও শুরু হয় জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০১৮/১৯।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী ম্যাচে নাটোর শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় ও নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। ম্যাচে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে মাঠেন নামে বাঁধন। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা যখন ঝড়ের গতিতে রান তুলছিল, ঠিক তখনই বল হাতে অ্যাকশনে আসে বাঁধন। অভিষেক এই ম্যাচে বাঁধন ১০ ওভার বল করে।
এতে ৫টি মেডেনসহ তুলে নেয় মূল্যবান ৪টি উইকেট। রান দেয় মাত্র ১০টি। তার অসাধারণ এই স্পেলে ব্যাটিংয়ে ধস নামে প্রতিপক্ষ দলের। ম্যাচ জিতে নেয় বাঁধনের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়। এরপরই খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার পারিবারিক অসহায়ত্বের বিষয়টি। উঠে আসে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটানো এই বিস্ময় বালকের বিমর্ষ পারিবারিক চিত্র।
বাবা মারা যাওয়ার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দেন তার মা। কিন্তু মায়ের শরীরটাও তত ভাল না।যেকোনো সময় বিছানায় পড়ে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে বিস্ময় বালক বাঁধনকে।ধ্বংস হয়ে যাবে তার ক্রিকেটার হওয়ার মহাস্বপ্ন।
সন্তানের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁধনের মা কোহিনুর বেগম বলেন, “আমার স্বপ্ন ছেলে একদিন বড় খেলোয়াড় (ক্রিকেটার) হবে। কিন্তু আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন কি পূরণ করবে? এত অভাব-অনটনের মধ্যে থেকে কিভাবে ও খেলাধুলা করবে।”
“দু’ বেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারি না। স্বামী মারা গেছে চার বছর হলো। বড় ছেলে বউ নিয়ে আলাদা থাকে। ও তো নিজের সংসারই চালাতে পারে না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দু’ মুঠো খাবার দিতেই পারি না।,তারপরও আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার ছেলেকে যেন উনি (আল্লাহ) বড় খেলোয়াড় বানায়। এই বাঁধনের এখন আমার একমাত্র সম্বল।
আমি সবার কাছে ওর জন্য দোয়া চাই,” যোগ করেন কোহিনুর বেগম। এ সময় পাশেই ছিল বাঁধন। ফুটফুটে চেহারার ছেলেটি ছলছল চোখে তাকিয়ে দেখছিল মায়ের দিকে। হয়তো মায়ের স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা তাকে নিয়ে গেছে গহীন চিন্তার জগতে। তাই হয়তো মনের অজান্তেই পানি এসে
ছল ছল করছে চোখ।
এ সময় বাঁধনের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার স্বপ্নের বিষয়ে। সে জানায় তার একটাই স্বপ্নমায়ের মুখে হাসি ফোটানো।বাঁধন বলে, “অনেক ছোট বেলায় বাবা মারা গেছে। তখন তেমন কিছুই বুঝতে পারতাম না।বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে মায়ের মুখে কখনো হাসি দেখিনি। যদি কোনো দিন ক্রিকেট খেলে টাকা কামাই করতে পারি, তাহলে সর্ব প্রথম মাকে একটা সুন্দর শাড়ি কিনে দিবো। আমি মাকে কখনো ভাল শাড়ি পরতে দেখিনি।
তার সব কাপড়ই ছেড়া ”
এবার অাবারো দুর্দান্ত বল করলো বাধন।নাটোর এর বিস্ময় বালক পিতৃহীন বাধন শেখ বাম হাতি লেগ স্পিনার।আজকে প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর ফাইনাল খেলায় ৬ অভার বল করে ৪ মেইডেন সহ মাত্র ৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেছে।