তবে বেশ কয়েকজন বুদ্ধিদীপ্ত বোলার রয়েছেন, যারা নিজেদের ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিজেদের অবস্থান শক্তপোক্ত করে তুলেছেন। এমনকি কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানরা ও তাদের মোকাবিলা করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছেন।
আজ আমরা আলোচনা করবো তেমনি ৫ জন বোলার সম্পর্কে, যারা খুব অল্প সময়ের মাঝেই ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদেরকে ভয়ঙ্কর রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং দ্রুততম ১০০টি উইকেটও তুলে নিয়েছেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সেই ৫ জন বোলার সম্পর্কে।
১. রশীদ খান (আফগানিস্তান)
রশীদ খান বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্পিন বোলার। আফগানিস্তানের এই তরুণ উদীয়মান লেগস্পিনার রশীদ খান আইসিসির ওয়ানডে বোলিং র্যাংকিংয়ে বর্তমানে ২ নম্বরে এবং টি টোয়েন্টিতে ১ নম্বরে অবস্থান করছেন।

লেগ স্পিনার রশীদ খান তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অবিশ্বাস্য সব গুগলি ও লেগব্রেক বলের মাধ্যমে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানিয়ে আসছেন। ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয় তার। সেই ম্যাচে তিনি ১টি উইকেট এবং ৮ রান সংগ্রহ করেন। আফগানিস্তান সেই ম্যাচে ৫৮ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায়।
আফগানিস্তানের এই তারকা স্পিনার রশীদ খান নিজেকে মেলে ধরেছেন মূলত ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগ আইপিএলে খেলার মধ্য দিয়ে। তিনি ২০১৭ সালে সানরাইজ হায়দ্রাবাদের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন এবং ১৬ টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
রশীদ খান গত মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের ৪৪ তম ওয়ানডে ম্যাচে ১০০ তম উইকেট লাভ করেন। এর মাধ্যমে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০টি উইকেট সংগ্রহ করার গৌরব অর্জন করেন।
২. মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
মিচেল স্টার্ক অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন একজন পেস বোলার। তাকে অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলারদের লিডার বলা হয়। তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে অস্ট্রেলিয়া অনেক ম্যাচ জিতেছে।

১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করা মিচেল স্টার্ক ২০ বছর বয়সে ২০ অক্টোবর ২০১০ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। তিনি ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা রাখেন। স্টার্ক ফাইনাল ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে আউট করে অস্ট্রেলিয়ার জয় অনেকাংশে নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও তিনি ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২২টি উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন এবং সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
মিচেল স্ট্রাক ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের ৫২ তম ম্যাচে ১০০ তম উইকেট লাভ করেন। সে সময়ে এটিই ছিল সবচেয়ে কম ওয়ানডে খেলে ১০০টি উইকেট নেয়ার রেকর্ড। পরবর্তীতে রশীদ খান গত মার্চে তার সেই রেকর্ড ভেঙ্গে শীর্ষে উঠে এসেছেন।
৩. সাকলায়েন মুশতাক (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার সাকলায়েন মুশতাক ১৯৭৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা স্পিন বোলার হিসেবে বিবেচিত।

সাকলায়েন মুশতাককে দুসরা বলের জনক বলা হয়। মুশতাক তার দুসরা ও লেগব্রেক বলের মাধ্যমে অসংখ্য ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন। ১৯৯৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকলায়েন মুশতাকের। তারপর থেকে প্রায় ৯ বছর ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেট খেলেন তিনি। এই ৯ বছরের ক্যারিয়ারে মুশতাক ১৬৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ২৮৮টি উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও টেস্টে মাত্র ৪৯টি ম্যাচ খেলে ২০৮টি উইকেট লাভ করেন।
সাকলায়েন মুশতাক ১৯৯৭ সালের ১২ মে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ৫৩ তম ম্যাচে নিজের ১০০ তম উইকেট লাভ করেন। ১৯ বছর পর ২০১৬ মিচেল স্টার্ক তার সেই রেকর্ড টপকে যান।
৪. শেন বন্ড (নিউজিল্যান্ড)
শেন বন্ড নিউজিল্যান্ডের সাবেক এবং অন্যতম সেরা একজন পেস বোলার। রিচার্ড হ্যাডলির পর শেন বন্ডকে নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা পেস বোলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২৭ বছর বয়সে ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। শেন বন্ড ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করতেন। তিনি ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ঘণ্টায় ১৫৬.৪ কিলোমিটার বেগে একটি বল ছুড়েছিলেন।
শেন বন্ড তার বলের গতি, অ্যাকুরেসি ও লেংথ বজায় রেখে ক্রমাগত বল করার মাধ্যমে ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতেন। মাত্র ৮ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি ৮২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৪৭টি উইকেট লাভ করেন। মূলত দেরিতে দলে ডাক পাওয়া এবং ইনজুরির কারণে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। শেন বন্ড তার ক্যারিয়ারের ৫৪ তম ওয়ানডে ম্যাচে ১০০ তম উইকেট নিয়েছিলেন।
৫. ব্রেট লি (অস্ট্রেলিয়া)
ব্রেট লি অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এবং অন্যতম সেরা একজন পেস বোলার। পাকিস্তানের শোয়েব আক্তারের পর তিনি ক্রিকেট বিশ্বের সেরা পেস বোলার হিসেবে বিবেচিত।

২০০০ সালের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ব্রেট লির। তিনি ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন। স্পিডস্টার ব্রেট লি ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচে ১৬১.১ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়েছিলেন,যেটি ছিল শোয়েব আখতারের পর সর্বোচ্চ গতির বোলিংয়ের রেকর্ড।তিনি তার ক্যারিয়ারে মোট ২২১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৩৮০টি উইকেট সংগ্রহ করেন এবং ব্যক্তিগত ৫৫ তম ওয়ানডে ম্যাচে ১০০ তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন।