নিজের সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে তার দিকে মায়েদের বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের নারীরা সুশিক্ষিত হবে এবং নিজের সন্তানকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক থেকে ছেলে-মেয়েরা যেন দূরে থাকে, সে জন্য মায়েদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। ’
গতকাল রবিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেগম রোকেয়া দিবস উদ্যাপন ও বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব না রেখে বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মায়েদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যাতে করে কোনো সমস্যা হলেই ছেলে-মেয়েরা তাদের নিজেদের মনের কথা মাকে বলতে পারে। কারণ মা-বাবাই হচ্ছে সন্তানের সব থেকে বড় বন্ধু। কাজেই সেই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ মাকেই নিতে হবে। ’ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম স্বাগত বক্তব্য দেন।
এ বছর নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের বিশিষ্ট পাঁচজন নারীকে বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার, কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষয়িত্রী অধ্যাপক জোহরা আনিস, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজ ও সাংস্কৃতিককর্মী শিলা চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখিকা এবং সমাজকর্মী রমা চৌধুরী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লেখিকা ও সমাজকর্মী রোকেয়া বেগম। এর মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার অনুষ্ঠানে পদক বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন, ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার কেন নাহি দেবে অধিকার হে বিধাতা’।
এই কান্না আমরা কাঁদতে চাই না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। অধিকার অর্জন করে নিতে হয়। সাথে সাথে এইটুকু বলব, অধিকার আদায় করতে গিয়ে সংসারে যেন ঝামেলা না হয়, অশান্তি না হয়। সেটাও দেখতে হবে। এখানে সবারই একটা দায়িত্ব থাকবে। পরিবারেরও দায়িত্ব আছে। সমাজের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্বটা থাকতে হবে। পরিমিতি বোধটা থাকতে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিমিতি বোধ, সেটা আমি মনে করি। ”
কেউ কাউকে জায়গা দেয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জায়গা করে দিতে হবে, সুযোগ করে দিতে হবে আর সুযোগের সদ্ব্যবহারটাও করতে হবে। ’
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সংগ্রাম করেছেন তাঁর পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি তাঁর জীবনে যেই মহান আত্মত্যাগ করেছিলেন, তাঁর সন্তান হিসেবে আমি তা জানি। তাই আজকের দিনে তাঁকে বারবার মনে পড়ছে। ’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আব্বা থাকতেন কারাগারে বন্দি। মা একদিকে যেমন আমাদের সব ভাই-বোনকে মানুষ করেছেন, আত্মীয়স্বজন বা পার্টির কেউ যদি অসুস্থ হতো তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বা তাদের দেখা, যারা জেলে যেত প্রত্যেকটা পরিবারকে তিনি নিজে সহযোগিতা করতেন। পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আব্বার জন্য মামলা মোকদ্দমা। একটার পর একটা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হতো সেগুলোও একাধারে দেখার কাজ তিনি করে যেতেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাঝে মাঝে ভাবি কিভাবে তিনি এত কিছু করতেন। আমার বাবার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন উপযুক্ত সাথী। যিনি সব সময় পাশে থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। ’ তিনি বলেন, ‘এই যে পাশে থেকে প্রেরণা দেওয়া, যার কারণে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছি। সেই ৭ই মার্চের ভাষণ, কতজন কত কথা বলেছে, শুধু মা বলেছে তোমার মনে যা আছে সেটাই তুমি বলবা। কারো কথা শোনার দরকার নাই। ’
নারীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে মেয়েদের কোনো স্থান সমাজে ও সরকারে থাকে না। এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। সেটার দিকে নজর রেখে চাকরি থেকে শুরু করে নারীদের জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ করে দিয়েছে। ’
বেগম রোকেয়ার অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা নারী সমাজকে আজকে যতটুকু প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি তার পথ দেখিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। একটা অন্ধকার যুগ ছিল যখন মেয়েদের লেখাপড়া শেখা নিষিদ্ধ ছিল। সেই অচলায়তন ভেদ করেছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি লেখাপড়া শিখেছিলেন এবং তাঁর স্বামী তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন আমরা বৃথা যেতে দেইনি আর দেবও না।