চিত্রা নদীর পাড়ে দুরন্ত দুষ্টুমিতে ভরা এক কিশোর থেকে ক্রিকেটের মহানায়ক বনে যাওয়া মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা সম্প্রতি বেশ আলোচিত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রাজনীতির ময়দানে নামার জন্য।ফলে ক্রিকেটের ময়দানের লড়াকু সৈনিক মাশরাফী যে দারুণ এক মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন, তা অনেকটাই আড়ালে চলে যাচ্ছে।
রোববার (৯ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস করতে নামার সময় অনন্য সেই মাইলফলকে নিজের নাম লেখাবেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
আগামীকালের ম্যাচের নামার মধ্যদিয়েই প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ২০০তম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলবেন ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক মাশরাফী। হাঁটুর ইনজুরিতে বারবার দল থেকে ছিটকে পড়া,৭ বার অপারেশন করেও বারবার ফিরে এসে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের বারবার অদল-বদল দেখা মাশরাফীর জন্য এটি অসাধারণ এক মুহূর্ত হতে চলেছে।
এখন পর্যন্ত ১৯৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা মাশরাফী বল হাতে ২৫২টি উইকেট লাভ করেছেন, যা কোনো বাংলাদেশি বোলারের সর্বাধিক উইকেট শিকারের কৃতিত্ব। এরমধ্যে অবশ্য তিনি দুইটি ম্যাচ খেলেছিলেন এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে।
বারবার ইনজুরিতে পড়ায় একজন পেস অলরাউন্ডার হিসেবে মাশরাফী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও ব্যাট হাতে তিনি যা করেছেন, তা নিজের চোখে কেউ না দেখলে উপলব্ধি করতে পারবেন না।
ক্রিকেট যতই পরিসংখ্যান ও সংখ্যার বাহারে পরিপূর্ণ হোক না কেন, এইসব দিয়ে একজন মাশরাফিকে মূল্যায়ন করা মানে ক্রিকেট মস্তিষ্ক না থাকা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪ গড়ে ১৭২২ রান করা ব্যাটসম্যানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। দলের প্রয়োজনে শেষদিকে এসে তার ব্যাটে রান পাওয়াতেই অনেক ক্লোজ ম্যাচে স্মরণীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তার খেলা মাঝারি ইনিংসগুলোই হয়েছে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
সেই মাশরাফী যখন কাল নিজের ২০০তম ওয়ানডে খেলতে মাঠে নামবেন, তখন কি একটু হলেও তাকে ছুয়ে যাবে আবেগ? নাকি আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে পূর্ণ মনোযোগ থাকবে খেলায়? তা জানার জন্য পড়ে রইল আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা।
অনেক স্মরণীয় ম্যাচের জয়ের নায়ক মাশরাফি। ২০০৪ সালের ভারত বধ, ২০০৭ বিশ্বকাপে আবারো ভারতকে হারিয়ে তাদের বিশ্বকাপ মিশন শেষ করা, ২০১০ সালে প্রথম ইংল্যান্ডকে ওয়ানডেতে হারানো, এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। তবে স্বল্প পরিসরের এই লেখায় বিশেষভাবে এই তিন ম্যাচ উল্লেখের কারণ হলো তখন জয়ের অভ্যাসটা টাইগারদের ঠিক গড়ে ওঠেনি, একেকটা জয় পেতে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হতো।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, তারপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতা, সর্বশেষ এশিয়া কাপে মাশরাফির নেতৃত্বে রানার্সআপ হয়ে আসাতো স্বাভাবিকভাবেই তাকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
অধিনায়ক মাশরাফী শুধু নেতা নয়, একজন বড় ভাই, একজন মেন্টর, একজন দিক নির্দেশনা প্রদানকারী, একজন বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সর্বোপরি সফল দলে পরিণত করা একই সূতায় গাঁথা একটি দলের বটবৃক্ষ, যার ছায়াতল পাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আজন্ম সৌভাগ্য! এই একটিমাত্র কারণে হলেও সদ্য রাজনীতিতে নাম লেখানো মাশরাফীর প্রতি দল-মত নির্বিশেষের থাকা উচিত অসীম শ্রদ্ধা, থাকা উচিত কৃতজ্ঞতা।