ব্রেকিং নিউজ

ঘরের মাঠে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশের সুযোগ

ইট মারলে নাকি পাটকেলটি খেতে হয়! তেমনই এক পরিস্থিতির মুখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত জুনে পেস সহায়ক উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করেছিলো ক্যারিবিয়ানরা! ৬ মাস পর তার জবাব দিলো বাংলাদেশও। চট্টগ্রামে স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে তাদের নাস্তানাবুদ করেছে স্বাগতিকরা। শুক্রবার ঢাকা টেস্টেও তেমন পরীক্ষার মুখে ক্যারিবীয়রা। প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টেও জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন।

অতীত স্মৃতি ঘেটে দেখা যাক এবার। ২০০৯ সাল, হুট করে ইনজুরিতে পড়েন নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি। তার পরিবর্তে সাকিবের কাঁধে তুলে দেওয়া হয় গুরু দায়িত্ব। তরুণ সাকিব খুব ভালোভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে দেখিয়ে দেন। তার নেতৃত্বেই বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় করে নেয় বাংলাদেশ। জয়টা হয়তো অপেক্ষাকৃত দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছিলো। আর্থিক বিষয় নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে দলের সিনিয়র ক্রিকেটার ক্রিস গেইল, সারওয়ান, শিবনারায়ন চন্দরপলরা বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই সিরিজটি বয়কট করেছিলেন। তাতে খর্বাশক্তির দলে পরিণত হওয়া ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করার ‍সুযোগ পায় সাকিবের দল।

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত টেস্ট সিরিজ জিতেছে ৩টি। দুটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবং একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেও অতৃপ্তি ছিল সেই কারণে। মুশফিকদের নামের সামনে তিনটি সিরিজ জয় মূলত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। এর আগে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সিরিজ জয়ের সুযোগ পেয়ে তা হাতছাড়া হয়েছে।

এবার বাংলাদেশের সামনে এই অপবাদ মুছে ফেলার সুযোগ। শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে পরাজয় এড়াতে পারলেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দ্বিতীয় বারের মতো পকেটে পুরে ফেলা যাবে সিরিজ। জিতলে যোগ হবে আরও একবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তি। একই সঙ্গে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবার টেস্টে হারিয়ে দেশের মাটিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশের সুবর্ণ সুযোগ।

তবে কাজটা কঠিন। গত ৯ বছরে পৃথিবীর অনেক কিছু বদলে গেলেও ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের চিত্র বদলায়নি। একে অন্যের বিপক্ষে ৪টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। সেই ৪টিতেই সিরিজ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যার মধ্যে ৩টিতেই আবার বাংলাদেশকে করেছে হোয়াইটওয়াশ। সর্বশেষ গত জুলাইয়েও ক্যারিবীয়ান সফরে গিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটা ২-০ তে হেরেছে বাংলাদেশ। অবশেষে চট্টগ্রামে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে তৃতীয় জয়ের পর এখন টাইগারদের সামনে টেস্ট সিরিজ জয়ের হাতছানি।
তবে চট্টগ্রামের মতো ঢাকার জয়টা সহজ হবে না স্বাগতিকদের জন্য। সাকিবরাও বিষয়টি ভালো করে জানেন। তাইতো নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে অনুশীলনে মনোযোগী সাকিব আল হাসানের দল।

টাইগারদের লক্ষ্য প্রথম টেস্টের চাইতেও ভালো পারফর্ম করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা। তেমনটি করতে হলে সাকিব মনে করেন চট্টগ্রাম টেস্টের চেয়েও ভালো পারফর্ম করতে হবে ঢাকাতে, ‘ওদের ছোট করে দেখার কিছু নেই। আমি নিশ্চিত যে ওরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফেরার চেষ্টা করবে। আমাদের আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আরো ভালো পারফর্ম করতে হবে। চিটাগংয়ের চাইতেও ভালো পারফর্ম করতে হবে। ওদের কোয়ালিটি বোলার আছে যারা আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। আমাদের আসলে ওই ধরনের প্রস্তুতি রাখতে হবে।’

অন্যদিকে ব্যাকফুটে থাকা ক্যারিবিয়ানরাও নিজেদের প্রস্তুত করছেন সে ভাবেই। প্রথম টেস্ট ভালো কিছু করতে না পারলেও প্রতিশোধ নিতেই তারা মাঠে নামবেন। কন্ডিশন যেমনই হোক, সিরিজ হার ঠেকাতে নিজেদের সেরাটা যে দেবেন সেই ব্যাপারে কোন প্রশ্ন থাকার উপায় নেই।

এদিকে অনুশীলনের সময় চোট পাওয়া মুশফিকুর রহিমের বিকল্প হিসেবে লিটন দাসকে দলে আনা হলেও ঢাকা টেস্টে মুশফিক খেলবেন বলে নিশ্চিত করেছেন সাকিব। তবে তার কিপিংয়ের বাড়তি দায়িত্বটুকু সামলাতে হতে পারে লিটন দাসকে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ম্যাচের দিন সকালে।
ঢাকা টেস্টে একাদশে কোন পেসারকে না দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। খুব সম্ভবত টিম ম্যানেজমেন্ট এমনটাই চিন্তা করছে। বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে চার স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। যদিও সকালের উইকেট দেখে এই পরিকল্পনার পরিবর্তন আসতেও পারে।

চার বিশেষজ্ঞ স্পিনারের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুল আছেন খণ্ডকালীন স্পিনার হিসেবে। এর বাইরে মিডিয়াম পেসে পটু সৌম্য। সবমিলিয়ে ৭ বোলারকে নিয়ে সাকিব বেশ ভালো ভাবেই বোলিং আক্রমণ সাজাতে পারবেন। তবে বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলেও বাংলাদেশের যত চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে। বেশ কিছুদিন ধরে ওপেনিং জুটিতে রান নেই। মিডল অর্ডারও ধারাবাহিক নয়। যার কারণে হয়তো বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সাকিবের কথায় তেমন ইঙ্গিত নেই তবে ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা লুকালেন না, ‘টেস্ট ক্রিকেটটাই এমন, উইকেট যখন পড়তে থাকে পড়া শুরু হলে একটা-দুইটা তাড়াতাড়ি পড়ে। আমি চাই প্রতিটি উইকেটেই যেন জুটি হয়। তবে যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছে সেখানে ব্যাটিং করাটাও বেশ কঠিন। আশা করবো যারা বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পাবেন, তারা নিজেদের ইনিংসটাকে আরও টেনে নিয়ে যাবেন।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য ঘুরে দাঁড়াতে মুখিয়ে আছে। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, শাই হোপ, কিয়েরন পাওয়েল, সুনীল অ্যামব্রিস, শিমরন হেটমায়ারে গড়া দলটির সেই সামর্থ্যও আছে। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট মনে করেন তেমনটা, ‘আমরা চাপের মধ্যে নেই। আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে। অবশ্যই আমরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছি, তাই আমাদের সিরিজ ড্রয়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে। ব্যাটিংয়ে শুরুর ৫ ব্যাটসম্যানকে ভালো করতে হবে। ছেলেরা সবসময়ই খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমাদের পরিকল্পনগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।’

সাকিব জানেন ক্যারিবিয়ানরা পাল্টা আক্রমণ করবে। তাইতো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে সতীর্থদের আহবান জানিয়ে রাখলেন। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের প্রতি সাকিবের এই আহ্বান, ‘আমি সবসময় অনুভব করি যার খেলার ধরন যেমন, তার তেমনটাই খেলা উচিত। আক্রমণাত্মক মানসিকতা থাকা খুবই জরুরী। যেই ব্যাটসম্যানটা টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে ম্যাচে প্রথম বলে চার মারে। সেই ব্যাটসম্যানকে আমি কখনই চাইব না টেস্টের প্রথম ম্যাচে ডিফেন্ড করুক। আমি চাই প্রত্যেকে যার যার স্বাভাবিক খেলাটাই খেলুক।’

Leave a Reply