ব্রেকিং নিউজ

অজুর ফজিলত ও নিয়ম

ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। ইসলাম শুধু শিরক ও পাপাচার থেকে আত্মিক পবিত্রতা লাভের ব্যাপারেই গুরুত্বারোপ করেনি; বরং সব ধরনের অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্রতায়ও গুরুত্বারোপ করেছে। কেননা বাহ্যিক পবিত্রতা আত্মিক পবিত্রতার প্রমাণ। আত্মিক পবিত্রতা হলো আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো সত্তার দাসত্বের কলুষতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। আর এ আত্মিক পবিত্রতার আহ্বানই ছিল নবীদের দাওয়াতের মূল বিষয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই রাসুল প্রেরণ করেছি। আর তাদের আহ্বান ছিলÑ তোমরা আল্লাহর দাসত্ব করো এবং তাগুতকে বর্জন করো।’ (সূরা নাহল : ৩৬)।

আর বাহ্যিক পবিত্রতা হলো নাপাকি ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে নবুয়তের প্রারম্ভিককালে যে আদেশগুলো দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ ‘আর আপনি আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন।’

(সূরা মুদ্দাসসির : ৪)। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে পবিত্রতা অর্জনকারীদের নিজ ভালোবাসার চাদরে আবৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতা অর্জন করে। আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা তওবা : ১০৮)। এখানে পবিত্রতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলোÑ ময়লা, নোংরা বস্তু ও নাপাকি থেকে পবিত্রতা।

অজুর ফজিলত
পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম সেরা মাধ্যম অজু। হাদিসে অজুর অশেষ প্রতিদানের ঘোষণা রয়েছে। অজুর মাধ্যমে পাপ মোচন হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো মোমিন বান্দা যখন অজু করে, তখন মুখ ধৌত করার সময় পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে তার ওইসব গোনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার দুই চোখের দৃষ্টি পড়েছিল, যখন দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে অথবা শেষ বিন্দুর সঙ্গে তার ওইসব গোনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলো তার দুই হাতে সম্পাদন করেছিল। আবার যখন দুই পা ধৌত করে, তখন পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে তার ওইসব গোনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলোর দিকে তার দুই পা অগ্রসর হয়েছিল; ফলে অজু শেষে লোকটি তার সমুদয় গোনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ৪৭০)।

কেয়ামতের দিন অজুর চিহ্ন দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদিকে অন্যসব উম্মত থেকে পৃথক করা হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখম-ল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বোখারি : ১৩৬)।

অজুর সুন্নত পদ্ধতি
পরিপূর্ণ ফজিলত লাভ করতে হলে সুন্নত অনুযায়ী অজু করতে হবে। অজুর সুন্নত পদ্ধতি সম্পর্কে ওসমান (রা.) এর আজাদকৃত দাস হুমরান থেকে বর্ণিতÑ ‘একবার ওসমান (রা.) অজুর পানি চাইলেন। এর পর তিনি অজু করতে আরম্ভ করলেন। তিনি তিনবার তার হাতের কবজি পর্যন্ত ধৌত করলেন। এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখম-ল ধৌত করলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করলেন।

এরপর বাম পা অনুরূপভাবে ধৌত করলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুল (সা.) কে আমার এ অজুর মতো অজু করতে দেখেছি এবং অজু শেষে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অজুর মতো অজু করবে এবং দাঁড়িয়ে এরূপে দু-রাকাত নামাজ আদায় করবে, সে সময়ে মনে মনে অন্য কোনো কিছু কল্পনা করবে না, তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম : ৪৩১)।

অজুর তাৎপর্য
অজুতে একজন মুসলিম চারটি অঙ্গ ধৌত করে। আর তা হলো মুখম-ল, দুই হাত, মাথা ও দুই পা। মানুষের জীবনের সব মৌলিক চিন্তাচেতনা ও কাজকর্ম এ অঙ্গগুলো দ্বারাই সম্পাদিত হয়। অজুর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এ অঙ্গগুলো কর্তৃক কৃত অপরাধ মোচন করে দেন। আর অজু শেষ করে অজুকারী তাওহিদের ঘোষণা দিয়ে সে নিজের আত্মিক ও দৈহিক পবিত্রতাকে পূর্ণ করে।

আর এই পূতপবিত্র দেহ ও আত্মাই জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে উত্তমরূপে অজু করে। অতঃপর বলেÑ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ আপনি আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর আপনি আমাকে পবিত্রদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি : ৫৫)।
অজুতে গলদ

অজুর ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অবলম্বন করতে হবে। আমাদের সমাজে দুই ধরনের লোক দেখা যায়। কিছু লোক অজুর বিধান যথাযথভাবে পালন করে না এবং সে ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন করে। অজুর অঙ্গগুলোতে পানি পৌঁছাতে বিন্দু পরিমাণ বাকি থাকলেও অজু শুদ্ধ হবে না। আবার কিছু লোক অজুর ব্যাপারে অপচয়ের নীতি অবলম্বন করে। এক নামাজের জন্য অনেকবার অজু করে। এটা শয়তানের একটি ওয়াসওয়াসা।

Leave a Reply